আজ ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিনা নোটিশে বদরখালী চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে জাল পুড়ে ধ্বংস করেছে মৎস্য কর্মকর্তা

মিজবাহ উদ্দীন আরজু  

বিনা নোটিশে বদরখালি চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে ১৩টি জাল জব্দ পরবর্তী পুড়ে ধ্বংস করার অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

শনিবার (১০ জানুয়ারী) চকরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফারহান তাজিমের নেতৃত্বে বদরখালি চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে এসব জাল জব্দ করা হয়। জেলেদের অভিযোগ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদেরকে মাসিক এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে আসছে তারা। বিনা নোটিশে তাদের এসব জাল পুড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এতে জেলেদের শেষ সম্বল পুড়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। এজন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা জেলেরা হলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের মুকবেকী এলাকার জাফর আলম, চকরিয়ার বশির আহমদ ও শাপলাপুর মিঠাছড়ির নাছির ও সাতঘর পাড়ার মোবারক হোসেন। জানা যায়, উক্ত চ্যানেলে প্রায় ১০০টির মত জাল বসিয়ে মাছ ধরে জেলেরা। সবগুলো জাল একই ধরনের। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিকাল ২টার দিকে চকরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বদরখালী চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে নদীতে থাকা ১৩টি বেহুন্দী জাল জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো আগুনে পুড়ে ধ্বংস করা হয়।

শাপলাপুর ইউনিয়নের মুকবেকী এলাকার জেলে জাফর আলম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি র্দীঘ ২০ বছর ধরে জেলে পেশায় আছি। গত রাত আমি নদীতে জাল রেখে প্রতিদিনের মত বাড়িতে আসি। পরে দুপুরে গিয়ে দেখি চকরিয়ার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমার চারটি জাল পুড়ে ফেলেছে। আমার জাল কোনো অবৈধ নয়। তাছাড়া এখন নদীতে কোনো নিষেধাজ্ঞাও নাই। যদি নিষেধাজ্ঞা থাকতো আমি জাল বসাতাম না। এমনিতেই আমি সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময় জাল বসাই না। এর আগেও আমার ৩টি জাল নিয়ে পুড়ে ফেলেছে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। আমার শেষ সম্বল পুড়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন আমার পরিবার কীভাবে চালাবো। আমার সম্পদ বলতে জালগুলো ছাড়া আর কিছুই নাই। আমি এর ক্ষতিপূরণ এবং সুষ্ঠু বিচার চাই। ঋণের কিস্তি নিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এর ক্ষতিপূরণ না পেলে আমার পরিবারে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে আহার জুটবে না।
চকরিয়ার জেলে বশির আহমদ বলেন, আমার কাছ থেকে মাসে ১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছে। আমি বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে আসছি এইবারে দিই নাই। সেজন্য বিনা নোটিশে আমার জাল পুড়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আমার জালগুলো কোনো অবৈধ নয়, ছোটখাটো মাছও আমার জালে ধরা পড়ে না। তিনি আরো বলেন, জেলেদের অনুদানের কথা বলে চকরিয়া মৎস্য অফিসের জনৈক জামাল নামের এক ব্যক্তি ৪০ জনের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নিয়েছে। এজন্য আমাদেরকে বিশেষ কিছু টোকেন দেওয়া হয়েছে। এই অনুদানের জন্য আমি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। এতে কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার কথা বলে আর ফেরত দেয় নাই। এতে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি এসব অনিয়মের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
শাপলাপুরের জেলে নাছির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমারকে এই চ্যানেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হয়রানি করে আসছে। আমার জাল পুড়ে ধ্বংস করেছে আজকে।
এ ব্যাপারে চকরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফারহান তাজিম বলেন, আজকে ১৩টি বেহুন্দী জাল বদরখালি চ্যানেল থেকে অভিযান পরিচালনা করে জব্দ করা হয়। বেহুন্দী জাল উপকূল এবং নদীসমুহে সারা বছর নিষিদ্ধ। প্রতিবছর এ নিয়ে জেলেদের সাথে বিভিন্ন সময় সচেতনতামূলক কার্যক্রম মৎস্য অফিস নিয়ে থাকে। এটি অনেক আগের আইন, নতুন কোন বিষয় নয়। দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সকলের সহযোগীতাও কামনা করেছেন এই কর্মকর্তা।

জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ বদরুজ্জামান বলেন, এখন অবৈধ জালের বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বেহুন্দি জাল, মশারি জাল, চরঘেরা জাল, বেড়/জগৎবেড় জাল ও কারেন্ট জাল এসব অবৈধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালতি হচ্ছে। আমরা গত পরশো দিনও জাল পুড়েছি। তবে আর্থিক কোনো লেনদেনের উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ...